হাওজা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, শোকসাহিত্যের ব্যাপারে, জামিয়া আমীরুল মোমিনীন (নাজাফি হাউস) মুম্বাই এর প্রিন্সিপাল, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন আলহাজ সৈয়দ আহমদ আলী আবদী সাহেব কিবলা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, যার পাঠ্য নিম্নরূপ।
কবিতার মধ্যে এক বিশেষ মাধুর্য পাওয়া যায় যা গদ্যের মধ্যে নেই, এই কারণে কবিতা আবৃত্তির উপর বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে এবং ইমামগণ (আঃ) বলেছেন যে, যারা আমাদের সম্মানে একটি কবিতা আবৃত্তি করবে তাদের জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। (সওয়াবুল আ'মাল, পৃষ্ঠা ৮৪..
ইমামগণ কবিদেরকে অত্যন্ত সম্মান এবং ভবিতব্য করেছেন, তাদের বিরাট প্রশংসা করেছেন, তাদের উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন এবং যেসব কবিরা আহলেবায়েত (আঃ)-এর গৌরবান্বিত বর্ণনা করতেন, বিশেষ করে যখন ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর লোমহর্ষক মসিবতের কবিতা আবৃত্তি কারী কবিগণ উপস্থিত হতেন তখন ইমামগণ বলতেন যে, ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর লোমহর্ষক মসিবতের ব্যপারে কবিতা ও মর্সিয়া কোথায়? এবং যখন তারা বলতেন যে, হ্যাঁ, কবিতা আবৃত্তি করেছি, তখন ইমামরা সভার আয়োজন করতেন এবং ওই কবিদের মেম্বারে অরোহনের নির্দেশ দিতেন, তারা কবিতা আবৃত্তি করতেন, ইমামগণ মুগ্ধ হতেন, তাঁরা তাদের সাবাশী দিতেন, সমর্থন করতেন এবং তাদের পুরস্কৃত করতেন। আর ওই পুরস্কার কোন সাধারণ পুরস্কার হতো না। একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, সোনার মুদ্রা দেওয়া হতো। অন্য একটি রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন একজন কবি এসে কবিতা আবৃত্তি করতেন তখন ঘরের মহর্ষিণী নারীরাও ওই কবিতা শুনতেন। আর কবিতা আবৃত্তির সভা শেষ হয়ে গেলে, মহিলারাও তাদের অলঙ্কার খুলে পাঠিয়ে দিতেন, এই বলে যে, এই মুহূর্তে আমরা সমস্যায় আছি তাই বর্তমানে এই অলঙ্কারগুলি উপহার হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং ইমামরাও মহিলাদের ওই কাজকে নিষেধ করেননি বরং সমর্থন করেছেন। অতএব, ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর দুঃখে কবিতা আবৃত্তি করা, শোনা এবং কবিদের পুরস্কৃত করা আহলেবায়েত (আঃ)- এর সুন্নাত।
ভালো কবিতার মধ্যে এক বিশেষ প্রভাব পাওয়া যায়, তাই আহলেবায়েত এর প্রশংসায় যে সব কবিতা আবৃত্তি করা হয় তা প্রত্যেকেরই নিজস্ব এক মর্যাদা রাখে। যাইহোক, যখন কবি নিজে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন, তখন তার লক্ষ্য হওয়া উচিত গুণাবলি এবং মসায়েব বর্ণনা করা, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ বা প্রশংসা লক্ষ্য হওয়া উচিত নয় বরং কবিতা আবৃত্তি করার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত তাঁদের প্রশংসা সম্প্রচার করা, মাহফিল রঙিন করে রং পরিবর্তন করা বা সমাবেশে উল্লাস করা নয়। উচ্চস্বরে নারা লাগানোর পরিবর্তে আহলেবায়েত (আঃ)-এর লোমহর্ষক মসিবতের কথা স্মরণ করা এবং রসূল নন্দিনী হযরত ফতেমা যাহরা (সাঃআঃ)-এর হৃদয়ের সন্তুষ্টি হওয়া।
বিশেষ করে আজকের কবিদের জন্য, কবিতার লক্ষ্য হওয়া উচিত গুণাবলী বর্ণনা করা এবং আযাদারীর সাথে সম্পর্কিত যে অভিযোগগুলি উত্থাপিত হচ্ছে তার জবাব দেওয়া। তাই ওই সমস্ত কবিতা যা ওই মহান লক্ষ্যের সফলতা এবং আন্তরিকতার সাথে আবৃত্তি করা হয়, অথবা ওই কবিতা যা শ্রোতার চোখে আহলেবায়েত (আঃ) দুর্দশার জন্য অশ্রুর উৎস হয়, তবে এই ধরনের কবিতা মানুষের জন্য জান্নাতের গ্যারান্টি হয়ে উঠতে পারে।
'মান বাকা ওয়া আবকা' (ইমাম হোসায়েন আঃ এর শোকে ক্রন্দন করা এবং অন্যদের ক্রন্দন করানো) মসিবত বর্ণনা করার সাথে সাথে কবিতারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই এমন কবিতা যা শ্রোতার চোখে অশ্রু প্রবাহিত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় নিঃসন্দেহে তা স্বর্গে যাওয়ার কারণ হবে। (কামিলুয যিয়ারাত)
অতএব, যারা এই সময়ে কবিতা আবৃত্তি করছেন তারা অবশ্যই নিজেদের জন্য এক মহান মর্যাদা প্রদান করছেন এবং হযরত যাহরা (সাঃআঃ)-এর হৃদয়ের শান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।
আমাদের উচিত কবিতা আবৃত্তি করার সময় ওই কবিতাগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যা দে'বাল এবং ফারাযদাক্বের মতো কবিগণ মাসুমীন (আঃ)-এর উপস্থিতিতে কবিতা আবৃত্তি করেছেন, যাতে মাসুমীনদের মহত্ত্বে প্রশংসা করার সময় আমাদের চিন্তাধারা ওই কল্পনার অনুসরণ না করে যা মানুষের প্রশংসা করার সময় কল্পনা করা হয়। বরং কবিতার প্রকৃতি ওই কবিদের চিন্তাধারার অনুসরণ করা উচিত, যাঁদের প্রতি ইমামদের সমর্থন আছে।
আমরা যদি ওই মাসুম ইমামদের সমর্থন কারী কবিদের অনুসরণ করি, তাহলে এটা অসম্ভব নয় যে, আমাদের কবিতাগুলোও ইমামে ওয়াক্তের সমর্থন পাবে। আর যে কবিতাটিতে ইমামে ওয়াক্তের সমর্থন থাকে তিনি অবশ্যই জান্নাতের গ্যারান্টি পাবেন।
মহান আল্লাহ তাআলা সকল কবিগণকে আহলেবায়েত (আঃ)-এর গুণাবলী, ফযিলত এবং মসায়েব বর্ণনা করার তৌফিক দান করুন এবং প্রতিটি কবিতা এমন হোক যা যুগের ইমাম (আঃফাঃ)-এর বারগাহতে সম্মানজনকভাবে গৃহীত হতে পারে।
ওয়াস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।